লোহা বা ইস্পাতই যে কেবল চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় বা এদেরকেই যে কেবল চুম্বকায়িত করা যায়, তা নয়। সকল পদার্থেরই চৌম্বক ধর্ম আছে এবং সকল পদার্থই চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা কম বেশি প্রভাবিত হয়। চৌম্বক আচরণের ওপর ভিত্তি করে পদার্থসমূহকে ডায়াচৌম্বক, প্যারাচৌম্বক, ফেরোচৌম্বক, এন্টিফেরোচৌম্বক ও ফেরিচৌম্বক পদার্থ হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।
যে সকল পদার্থকে চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্রের বিপরীত দিকে সামান্য চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ বলে।
যখন কোনো ডায়াচৌম্বক পদার্থকে বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়, তখন দেখা যায় ডায়াচৌম্বক পদার্থটির অভ্যন্তরে চৌম্বকক্ষেত্র বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রের চেয়ে সামান্য কম হয়। কোনো ডায়াচৌম্বক পদার্থকে কোনো অসম চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে, এটি চৌম্বকক্ষেত্রের সবলতর অঞ্চল থেকে দুর্বলতর অঞ্চলের দিকে গতিশীল হতে চায়। প্রযুক্ত চৌম্বকক্ষেত্র খুবই শক্তিশালী না হলে ডায়াচৌম্বক প্রভাব এত অল্প হয় যে তা ধরাই যায় না। ডায়াচৌম্বক পদার্থের আচরণ তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে না। তামা, দস্তা, বিসমাথ, রুপা, সোনা, সীসা, কাচ, মার্বেল, পানি, হিলিয়াম, আর্গন, সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি ডায়াচৌম্বক পদার্থের উদাহরণ।
যে সকল পদার্থকে চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্রের দিকে সামান্য চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে প্যারাচৌম্বক পদার্থ বলে ।
যখন কোনো প্যারাচৌম্বক পদার্থকে বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়, তখন দেখা যায় প্যারাচৌম্বক পদার্থটির অভ্যন্তরে চৌম্বকক্ষেত্র বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রের চেয়ে সামান্য বড় হয়। কোনো প্যারাচৌম্বক পদার্থকে অসম চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করলে সেটি চৌম্বকক্ষেত্রের দুর্বলতর অঞ্চল থেকে সবলতর অঞ্চলের দিকে গতিশীল হতে চায়— যা ডায়াচৌম্বক পদার্থের উল্টো। প্যারাচৌম্বক পদার্থের আচরণ তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রেও কেবল শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র প্রযুক্ত হলেই প্যারাচৌম্বক প্রভাব দৃশ্যমান হয়। কয়েকটি প্যারাচৌম্বক পদার্থ হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম, সোডিয়াম, এন্টিমনি, প্লাটিনাম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, তরল অক্সিজেন প্রভৃতি।
যে সকল পদার্থকে চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্রের দিকে শক্তিশালী চুম্বকত্ব লাভ করে তাদেরকে ফেরোচৌম্বক পদার্থ বলে ।
যখন কোনো ফেরোচৌম্বক পদার্থকে বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়, তখন ফেরোচৌম্বক পদার্থের অভ্যন্তরে চৌম্বকক্ষেত্র বহুগুণ বর্ধিত হয়। কোনো ফেরোচৌম্বক পদার্থকে অসম চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করলে সেটি দ্রুত চৌম্বকক্ষেত্রের দুর্বলতর অঞ্চল থেকে সবলতর অঞ্চলের থেকে গতিশীল হয়। অন্য কথায় খুবই দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রেও ফেরোচৌম্বক প্রভাব দেখা যায়। তাপমাত্রার একটি নির্দিষ্ট মান অতিক্রম করলেই ফেরোচৌম্বক পদার্থ চুম্বকত্ব হারায়। এ তাপমাত্রাকে কুরি তাপমাত্রা বলে। ফেরোচৌম্বক পদার্থের উদাহরণ হলো লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি। লোহার কুরি তাপমাত্রা 1043K
এন্টিফেরোচৌম্বকত্বের উদ্ভব হয় যখন পার্শ্ববর্তী পরমাণুসমূহের স্পিন ভ্রামকগুলো প্রতি সমান্তরালভাবে সজ্জিত হয় (চিত্র ৪.২৩ক) বা যখন বিনিময় ইন্টিগ্রাল
ঋণাত্মক হয়। এন্টিফেরো চুম্বকত্ব প্রদর্শন করে এরকম কেলাসে দুই ধরনের সাবল্যাটিস থাকে যার একটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে একদিকে চুম্বকিত থাকে অন্যটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপরীত দিকে চুম্বকিত থাকে। এ ধরনের চুম্বকত্ব প্রথম পরিলক্ষিত হয়। ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের (MnO) কেলাসে। বাহ্যিক চুম্বকক্ষেত্রের অনুপস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী চৌম্বক ভ্রামকগুলো একে অপরের ক্রিয়া নাকচ করে দেয় ফলে পদার্থটি সামগ্রিকভাবে কোনো চুম্বকত্ব প্রদর্শন করে না। বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয় তখন ক্ষেত্রের দিক বরাবর সামান্য চুম্বকত্বের উদ্ভব হয় যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় । একটা ক্রান্তি তাপমাত্রায় চুম্বকত্ব সর্বাধিক হয় যাকে বলা হয় নীল তাপমাত্রা (Neel temperture)। এই তাপমাত্রার ওপরে চুম্বকত্ব ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেতে থাকে এবং এক সময় প্যারাচৌম্বক পদার্থের ন্যায় আচরণ করতে থাকে।
ফেরিচৌম্বক পদার্থ এন্টিফেরোচৌম্বক পদার্থের অনুরূপ শুধুমাত্র পার্থক্য এই যে, প্রতি সমান্তরালভাবে সাজানো এর পার্শ্ববর্তী পরমাণুসমূহের স্পিন ভ্রামকগুলোর মান অসমান (চিত্র ৪.২৩খ) যার ফলে একটা লব্ধি চৌম্বকত্বের উদ্ভব হয়। এই ধরনের চুম্বকত্ব সাধারণত ফেরাইট Fe3O4 (Ferrites)-এর মধ্যে দেখা যায়।
কার্যক্রম : ডায়া, প্যারা ও ফেরোচৌম্বক পদার্থের মধ্যে পার্থক্যের একটি চার্ট তৈরি কর । |
---|
আরও দেখুন...